Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

টিসু কালচার চারায় জি-৯ কলা চাষ

টিসু কালচার চারায় জি-৯ কলা চাষ
মৃত্যুঞ্জয় রায়
‘গ্র্যান্ড নাইন’ (জি৯) এক ধরনের সাগর কলার মতোই উন্নত জাতের কলা যা সম্প্রতি বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গ্র্যান্ড নাইন একটি ক্যাভেন্ডিজাতীয় কলা যার প্রজাতি গঁংধ ধপঁসরহধঃধ. চিকিতা ব্র্যান্ড ইন্টারন্যাশনালের একটি অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক জাতের কলার কারণে একে অনেকে ‘চিকিতা ব্যানানা’ নামেও ডাকেন। ফরাসী ভাষায় ‘এৎধহফ ঘধরহ’ বা ‘এৎধহফ ঘধরহব’ কলার আভিধানিক অর্থ খধৎমব উধিৎভ বা বৃহৎ বামন। এর গাছ জায়ান্ট ক্যাভেন্ডিশ জাতের চেয়ে খাটো, কিন্তু ডোয়ার্ফ ক্যাভেন্ডিশ জাতের গাছের
চেয়ে লম্বা। ভারতে ইসরায়েল থেকে ১৯৯৫ সালে জি-৯ কলা আনা হয়, সে দেশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫০ লাখ জি-৯ টিসু
কালচার চারা উৎপাদিত ও রোপিত হয় যা মোট কলাচাষের প্রায় ১৭%।
বাংলাদেশে এ জাতের কলার চাষ শুরু হয়েছে। সরকারিভাবে মাদারীপুর হর্টিকালচার সেন্টারে জি-৯ কলার টিসুকালচার চারার উৎপাদন ও বিক্রি করা হচ্ছে। উচ্চফলন ও অধিক সংরক্ষণকালের কারণে অনেকেই এখন জি- ৯ জাতের কলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এ জাতের কলার চারা উৎপাদিত হয় টিসু কালচারের মাধ্যমে। সনাতন প্রথায় প্রচলিত জাতের কলা চাষ করতে গেলে রোগমুক্ত চারা সহজে মেলে না। কিন্তু টিসু কালচারের চারা সম্পূর্ণভাবে রোগমুক্ত। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় কোনো কোনো ঘেরের পাড়ে স্থানীয় আইট্যা কলা, ঠুটে বা বাংলা কলা, কাচা কলা ইত্যাদি জাতের কলা চাষ করা হয়। এসব স্থানীয় জাতের কলাগাছ লম্বা, বছরে একবার কলা ধরে ও ফলন কম হয়। অনেক সময় গাছ লম্বা হওয়ায় ঝড়-বাতাসে ভেঙে পড়ে। অথচ জি- ৯ জাতের কলায় এসব অসুবিধা নেই। তাই ঘেরের পাড়ে এ জাতের কলা চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া যেতে পারে। সারা দেশে মাঠেও এককভাবে বাগান আকারে বাণিজ্যিকভাবে জি-৯ কলার চাষ করা যায়। এক একর এ জাতের কলা চাষে প্রায় ৩ লাখ টাকা লাভ হয়।
জি- ৯ কলার বৈশিষ্ট্য
এ জাতের কলার ফলন বেশি, সুস্বাদু ও রোগ প্রতিরোধী। একটি গাছ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ কেজি বা ২২০-২৪০টি কলা পাওয়া
যায়, সেখানে প্রচলিত জাতের কলা পাওয়া যায় সর্বোচ্চ   ৬০-১২০টি। দুই
বছরে তিনবার ফল পাওয়া যায়। গাছ মাঝারি আকারের (২ মিটার লম্বা) ও শক্ত হওয়ায় ঝড়-বাতাসে সহজে ভেঙে পড়ে না। এমনকি এ জাতের কলা জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত সহনশীল। গাছ থেকে কলা পাড়ার পর তুলনামূলকভাবে এই কলা বেশি দিন টিকে থাকে বা নষ্ট হয় না। কাঁদির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সবগুলো কলার আকার এক রকম হয়। পাকা কলার রং আকর্ষণীয় হলুদ, লম্বা ও কম বাঁকানো, কলার গায়ে কোনো দাগ পড়ে না। এসব কারণে বিশ্বব্যাপী ‘জি- ৯’ জাতের কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
টিসু কালচার চারা উৎপাদন
(ক) ল্যাবরেটরিতে টিসু কালচার চারা উৎপাদন : সারা বিশ্বে জি-৯ জাতের কলা সবচেয়ে বেশি চাষ করা হয়। চাষকৃত এ জাতের কলার বিপুল পরিমাণ চারা টিসু কালচার পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হয়। টিসু কালচার বা কোষকলা আবাদ উদ্ভিদ বংশবিস্তারের একটি পদ্ধতি, যেখানে বীজের পরিবর্তে কোনো উদ্ভিদের এক বা একাধিক কোষগুচ্ছ থেকে জীবাণুমুক্ত পরিবেশে আবাদ মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা হয়। কলাগাছের কন্দ বা করম, সাকার বা তেউড়, অসি তেউড় বা সোর্ড সাকার সাধারণত রোপণ দ্রব্য হিসেবে লাগানো হয়। এর বদলে গাছের কোষ বা টিসু ব্যবহার করা হয় চারা উৎপাদনের জন্য। সুস্থ, নীরোগ ও উন্নতমানের পরীক্ষিত মাতৃকলাগাছের কোষ বা মেরিস্টেম নিয়ে অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিম উপায়ে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে টেস্ট টিউবের মধ্যে কলার টিসু কালচার চারা উৎপাদন করা হয়। এভাবে হাজার হাজার চারা ল্যাবরেটরিতে ঘরের মধ্যে উৎপাদন করা যায়। টেস্ট টিউবে উৎপাদিত ছোট চারাকে পরে পলিব্যাগে লালনপালন করে বড় করা হয়।
(খ) ঘরোয়া পরিবেশে টিসু কালচার চারা উৎপাদন : ল্যাবরেটরিতে টিসু কালচার চারা উৎপাদন করা ব্যয়সাধ্য ও অনেক কারিগরি বিষয় সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হয়। কিন্তু যে কেউ চাইলে নিজের বাড়িতেও টিসু কালচার চারা উৎপাদন করতে পারেন। অবশ্যই সেসব চারা কখনোই ল্যাবরেটরিতে উৎপাদিত চারার মতো শতভাগ রোগমুক্ত হবে না, কিন্তু প্রচলিত পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনের চেয়ে অনেক ভালো এবং একটি গাছ থেকে অনেকগুলো চারা উৎপাদন করা যায়।
এ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করতে হলে জি-৯ জাতের কলাগাছের ফল সংগ্রহ শেষ হলে গাছ কেটে তার গোড়া বা মোথা তুলে নিয়ে আসতে হবে। এরপর মোথার শিকড় ও মাটি পরিষ্কার করে মোথা পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। মোথা থেকে যতগুলো চোখ আছে সেগুলো ধারাল চাকু দিয়ে চৌকা ব্লক করে তুলতে হবে। চোখের আকার অনুযায়ী প্রতিটি ব্লকের আকার ৪-৫ সেন্টিমিটার হতে পারে। বাড বা চোখগুলো ৫ লিটার পানিতে ১ চা-চামচ গুঁড়া সাবান গুলে তাতে ভালো করে ডুবিয়ে ও ধুয়ে শোধন করতে হবে। এতে কুঁড়ি বা চোখে কোনো রোগজীবাণু থাকলে সেগুলো নিষ্ক্রিয় হবে বা মরে যাবে।

চারা তৈরির জন্য মিডিয়া বা মাধ্যম লাগবে। তাই ৭০% ধানের পোড়া তুষ ও ৩০% ভার্মিকম্পোস্ট বা দো-আঁশ মাটি একসাথে ভালভাবে মিশিয়ে সেই চারা জন্মানোর মাধ্যম বা মিডিয়া তৈরি করতে হবে। একটি চৌকা ট্রেতে এই মাধ্যম বা তুষ-মাটি ভরতে হবে। পানির ছিটা দিয়ে তা ভিজাতে হবে। এরপর চোখগুলো সারি করে ৮-১০ সেন্টিমিটার দূরত্বে রেখে বসাতে হবে। চোখের পিঠ থাকবে উপরে। শুকনো পোড়া তুষ বা মাধ্যম ছিটিয়ে চোখগুলো ঢেকে দিতে হবে। পানির ছিটা দিয়ে তা ভিজাতে হবে। রোজই অল্প অল্প করে পানি দিয়ে ট্রের মাধ্যম ও চোখ ভিজাতে হবে। এভাবে রেখে দিলে চোখগুলো থেকে চারা বের হবে। মাসখানেক বয়স হলে চারাগুলো রোপণের উপযুক্ত হবে।  
টিসু কালচার চারার কলা চাষে সুবিধা
টিসু কালচার পদ্ধতিতে অল্প সময়ের মধ্যে একসাথে প্রচুর চারা তৈরি করা যায়। সম্পূর্ণ রোগমুক্ত চারা পাওয়া যায়। এমনকি চারা লাগানোর পরও শুধু সিগাটোকা রোগ ছাড়া আর তেমন কোনো রোগ হয় না। মাত্র ৮-৯ মাসের মধ্যে কলা পাওয়া যায়, যেখানে অন্য জাতের কলা পেতে ১১-১৫ মাস অপেক্ষা করতে হয়। অন্য জাতের চেয়ে ফলন দেড় থেকে দ্বিগুণ বেশি। একটি কাঁদির ওজন ৩০ কেজি পর্যন্ত হয়। একসাথে ফল আসে ও একসাথে সব কাঁদি কাটা যায়।
ঘেরের পাড়ে ও মাঠে কলা চাষ প্রযুক্তি
গর্ত তৈরি : ঘেরের পাড় ৩ মিটারের বেশি চওড়া হলে ২ সারি আর এর কম চওড়া হলে এক সারিতে এ জাতের কলার চারা রোপণ করা যায়। শতকে ১০০টি গাছ রোপণ করা যায়। চারা থেকে চারার রোপণ দূরত্ব দিতে হয় ৬ ফুট বা ২ মিটার। মাঠে বাগান আকারে জি-৯ কলা চাষ করতে চাইলে লাগবে উঁচু বন্যামুক্ত জমি যেখানে নিকাশ ব্যবস্থা ভালো আছে। জমি পরিষ্কার ও আগাছামুক্ত করার পর সেখানে ৬ ফুট পর পর সারি করে প্রতি সারিতে ৫ ফুট পর পর চারা লাগানোর জন্য গর্তের স্থান চিহ্নিত করতে হবে। ৬ী৬ ফুট দূরত্ব দিলে এক একরে ১২০০টি চারা রোপণ করা যায়। চারা রোপণের আগে সারিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে সব দিকে ৪০-৪৫ সেন্টিমিটার মাপে গর্ত তৈরি করতে হয়। গর্তের মাটির সাথে গর্তপ্রতি ১০ কেজি গোবর বা খামারজাত সার, ১০০-১৫০ গ্রাম টিএসপি, ১০০-১৫০ গ্রাম এমওপি, ৫০ গ্রাম জিপসাম ও ১০ গ্রাম জিংক সালফেট সার মিশিয়ে গর্ত ভরে ১০-১৫ দিন রেখে দিতে হবে। গর্তের মাটির সাথে গর্তপ্রতি ২৫০ গ্রাম নিম খইল ও ২০ গ্রাম দানাদার কীটনাশক (কার্বোফুরান জাতীয়) দিতে পারলে উপকার হয়, এতে মাটিতে কৃমি থাকলে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়। গর্তের মাটি হালকা পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে।
চারা রোপণের সময় : বছরের যে কোনো সময় এ কলার চারা রোপণ করা যায়। তবে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চারা রোপণের জন্য সবচেয়ে ভালো সময়।
চারার হার : এক একর ঘেরের চারদিকের পাড়ে রোপণের জন্য প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০টি চারা লাগবে। একক বাগান আকারে মাঠে এ কলার চাষ করলে ১ একর জমিতে ১৪০০ থেকে ১৫০০টি চারা রোপণ করা যায়।
চারা রোপণ : পলিব্যাগে জন্মানো টিসু কালচারের চারা রোপণ করতে হবে। পলিব্যাগ কেটে ফেলে দিয়ে চারা গর্তের মাঝখানে লাগাতে হবে। রোপণের পর গর্তে সেচ দিতে হবে। চারার ওজন ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি হলেই তা রোপণের উপযুক্ত বলে বিবেচনা করা হয়। পলিব্যাগ বা ট্রেতে উৎপাদিত চারার বয়স ১ মাস হলে তা রোপণ করা যায়।
সার ও সেচ প্রয়োগ : সম্পূর্ণ পরিমাণ গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট এবং বোরিক এসিড এবং অর্ধেক এমওপি সার গর্ত তৈরির সময় মাটির সাথে প্রয়োগ করতে হবে। গাছপ্রতি ৭৫ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম এমওপি সার চারা রোপণের ২ মাস পর থেকে ২ মাস পর পর ৩ বারে এবং ফুল আসার পর আরও একবার গাছের চারপাশে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। সার দেয়ার সময় জমি হালকাভাবে কোপাতে হবে যাতে শিকড় কেটে না যায়। জমির আর্দ্রতা কম থাকলে সার দেয়ার পর পানি সেচ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। গর্তের মাটি শুকিয়ে এলেই সেচ দিতে হবে।
ঠেকনা দেওয়া : স্বাভাবিকভাবে গাছ কাঁদির ভার সইতে পারে, তবে কাঁদি খুব বড় হয়ে গেলে বাঁশ দিয়ে ঠেকনা দেওয়া ভালো।
লেখক : কৃষিবিদ ও লেখক, অতিরিক্ত পরিচালক (অব:), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা ১২১৫, মোবাইল : ০১৭১৮২০৯১০৭, ইমেইল : kbdmrityum@yahoo.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon